মহাকাশে মোট কতটি স্যাটেলাইট আছে এবং এর কাজ কি?
মহাকাশে মোট কতটি স্যাটেলাইট আছে : বাংলাদেশ এখন স্যাটেলাইটের যুগে পদার্পণ করেছে কেননা বহির্বিশ্বের ন্যায় আমাদের দেশেও স্যাটেলাইট নির্ভর প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হচ্ছে। আমাদের দেশের প্রথম স্যাটেলাইট হলো বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ০১।
মহাকাশে মোট কতটি স্যাটেলাইট আছে এবং এর কাজ কি
স্যাটেলাইট সম্পর্কিত বিশেষ কিছু অজানা তথ্য নিয়ে আজকে আমরা আপনাদের সামনে আলোচনা করব। BBC WORD
বাংলাদেশ এখন স্যাটেলাইটের যুগে পদার্পণ করেছে কেননা বহির্বিশ্বের ন্যায় আমাদের দেশেও স্যাটেলাইট নির্ভর প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হচ্ছে। আমাদের দেশের প্রথম স্যাটেলাইট হলো বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ০১। যা ২০১৮ সালের ১১ ই মে মহাকাশে প্রেরণ করা হয়। যাতে করে আমরা স্যাটেলাইটের যুগে পদার্পন করেছি। মহাকাশে মোট কতটি স্যাটেলাইট আছে এবং এর কাজ কি
স্যাটেলাইট নিয়ে আলোচনা করতে আসুন প্রথমে জেনে নিই স্যাটেলাইট কি? এবং কিভাবে কাজ করে?
স্যাটেলাইট কি?
স্যাটেলাইট নিয়ে আমাদের অনেকের মনেই অনেক রকম প্রশ্ন জেগে ওঠে। স্যাটেলাইট কি? কেনই বা এত টাকা খরচ করে স্যাটেলাইট তৈরি করা হয়? বা স্যাটেলাইট তৈরি উদ্দেশ্যই বা কি? অথবা স্যাটেলাইট তৈরি করে বা মহাকাশে প্রেরণ করে কি কি সেবা ভোগ করা যায়? এসকল প্রশ্নই নিতান্তই আমাদের মাথায় সবসময় ঘুরপাক খায়। আজ আমরা সকল প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করব।
সৌরজগতের প্রধানত আটটি গ্রহ আছে। এবং এই আটটি গ্রহের মধ্যে দুইটি গ্রহের কোন উপগ্রহ নেই। অন্যথায় বাকি সবারই একটি বা দুটি বা অনেকগুলোই উপগ্রহ রয়েছে। জীবন পৃথিবীর উপগ্রহ রয়েছে ০১ টি মঙ্গলে রয়েছে ০২ টি বৃহস্পতির রয়েছে ৭৯ টি শুনি রয়েছে ৮২ টি ইউরেনাসের রয়েছে ২৭ টি এবং নেপচুনের রয়েছে ১৪ টি উপগ্রহ। এ থেকে আমরা বলতে পারি উপগ্রহের সাথে আমরা সবাই কম বেশি পরিচিত। আমরা জানি উপগ্রহ দুই প্রকার। যেমন:
১.প্রাকৃতিক উপগ্রহ (Natural Satellite)
২.কৃত্রিম উপগ্রহ (Artificial Satellite)
আমাদের পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ হল চাঁদ। বাকি দেশগুলো উপগ্রহ গ্রহ গুলো আমাদের পৃথিবীতে বেষ্টিত হয়ে আছে তার সবই কৃত্রিম উপগ্রহ বা আর্টিফিশিয়াল স্যাটেলাইট।
কৃত্রিম উপগ্রহ (Artificial Satellite) কি?
কৃত্তিম বলতে আমরা মানব কিছু উপাদান কেই বুঝি। যে সকল উপাদান মানুষ নিজে হাতে তৈরি করে বা সৃষ্টি করে তাকেই কৃত্রিম বলেই মেনে নেয়া হয়। আর ঠিক তেমনি কৃত্রিম উপগ্রহ মানবসৃষ্ট উপগ্রহ। যা মানুষ ব্যক্তির প্রয়োজনে তৈরি করে থাকে। এসকল উপগ্রহগুলো যেগুলো মানব সৃষ্ট বা কৃত্রিম উপগ্রহ সেগুলোই পৃথিবীর চারদিকে প্রতিনিয়ত ঘটছে। পূর্বে যেমনটি বললাম চাঁদ ব্যতীত পৃথিবীর সকল উপগ্রহ কৃত্রিম উপগ্রহ হিসেবে পরিগণিত হয়। একটি উপগ্রহ বা স্যাটেলাইট কে সমগ্র পৃথিবীকে একবার প্রদক্ষিণ করতে একদিন বা ২৪ ঘন্টা সময় লাগে।
প্রথমত যখন কৃত্রিম উপগ্রহ সৃষ্টি করা হয় তখন মূলত পৃথিবীপৃষ্ঠের উন্নত মানচিত্র উন্নত করার জন্য কৃত্রিম উপগ্রহ তৈরি করা হয়। তাছাড়া উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা যেটা তারবিহীন যোগাযোগ ব্যবস্থা বলা হয় তার উন্নয়নে কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তারবিহীন যোগাযোগব্যবস্থা যেমন ইমেজিং, ফটোগ্রাফি, আবহাওয়া পূর্বাভাস, বিভিন্ন দুর্গম এলাকার ম্যাপিং, দূরবর্তী যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, ইন্টারনেট সেবা এবং টিভি চ্যানেল সম্প্রচারে কৃত্রিম উপগ্রহ বাসের ব্যবস্থা বিশেষভাবে সহায়তা করে যাচ্ছে।
পূর্বে আমরা স্যাটেলাইট সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য জেনেছি এবার আমরা জানবো মূলত স্যাটেলাইটের কাজ কি?
স্যাটেলাইটের কাজ কি?
ইতোপূর্বে আলোচনায় আমরা স্যারের সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্যের মাধ্যমে কিছুটা ধারণা পেয়েছি মহাকাশে মোট কতটি স্যাটেলাইট এবং স্যাটেলাইট কিভাবে কাজ করে তার সম্পর্কে। এবার আমরা স্যাটেলাইটের কাজ কি? এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।
অনেকের এমন ধারণা হতে পারে তার দিয়ে বা সাবমেরিন ক্যাবল ব্যবহার করে আমরা উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কাজ সম্পন্ন করতে পারি। তাহলে এত অর্থ খরচ করে একটি স্যাটেলাইট তৈরি করার কি প্রয়োজন স্যাটেলাইটের দরকারি বা কি? স্যাটেলাইট এমন কি কাজ করে?
কখনো এমন হতে পারে আপনি কোন দুর্গম এলাকায় আছেন। যেখানে ইতোপূর্বে প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংঘটিত হয়েছে যার জন্য আশেপাশে মোবাইল টাওয়ার গুলো সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে পড়েছে। তখন আপনি আপনার আশেপাশে কোন মানুষদের সাথে কোন যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করতে পারছেন । আপনি যদি শুধুমাত্র মোবাইল টাওয়ারের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে থাকেন তবে আপনি কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন না। এই মুহূর্তে আপনি কি করবেন।
এবং এমন হতে পারে আপনি সমুদ্র কে জানে কোথায় গিয়েছেন অ্যামাজন বন কিংবা সাহারা মরুভূমিতে নির্জন কোন স্থানে আপনি ঘুরতে গিয়েছেন। এ সকল স্থানে আপনি কোন মোবাইল টাওয়ার বা কোন জনসংযোগ পাবেন না। সেই মুহূর্তে আপনি কি করবেন? আপনার করার মতো কিছুই থাকবে না। ঠিক সেই মুহুর্তে আপনার কাছে যদি কোন স্যাটেলাইট ফোন থাকে তবে সহজেই আপনি আপনার কাছের মানুষ জনের সাথে অথবা দূরের কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন।
অন্যদিকে চিন্তা করলে আমরা এমন কিছু বুঝি যে আমাদের সবাই কমবেশি গুগল ম্যাপের উপর নির্ভরশীল। আমরা যদি অজানা কোন জায়গায় অবস্থান করিবে ঘুরতে যায় তখন আমরা কমবেশি সকলেই গুগল ম্যাপ দেখে সেই জায়গার অবস্থান সম্পর্কে জেনে নিই। কিন্তু সেই স্থানে যদি কোন জনসংযোগ বা মোবাইল নেটওয়ার্ক যদি না থাকে তখন আপনি কি করবেন? বা স্যাটেলাইট যদি না থাকতো তবে সেই স্থানের ম্যাপ আপনি কিভাবে পেতেন? এ সকল কাজে স্যাটেলাইট আপনাকে সরাসরি সাহায্য করতে পারে।
মহাকাশে স্যাটেলাইট
আমরা কি জানি মহাকাশে মোট কতগুলো স্যাটেলাইট আছে?
আমরা কি জানি মহাকাশে স্যাটেলাইট গুলো কিভাবে কাজ করে?
এবার জেনে নেয়া যাক “ কতগুলো স্যাটেলাইট আছে?”
পূর্বে আমরা জেনেছি বাংলাদেশও স্যাটেলাইটের যুগে পদার্পণ করেছে। পৃথিবীর ৫৭ তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ মহাকাশে স্যাটেলাইট প্রেরণ করেছে। শুধু বাংলাদেশ নয় রাশিয়া আমেরিকা চীন জাপান পাকিস্তান ভারত সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখন পর্যন্ত প্রায় ১১ রকমের ৪২০০ স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠিয়েছে। এ সকল দেশের স্যাটেলাইটগুলো মহাকাশ ছেড়ে রেখেছে।
মহাকাশে প্রেরন করা সকল স্যাটেলাইট এর মধ্যে রাশিয়ার প্রায় ১৪৬০, আমেরিকার ১২৫০, জাপানের ১৫০, ভারতের ১৭৫, চায়নার ২৭০, ফ্রান্স ৬০, জার্মানি ৫০, ইংল্যান্ড ৪০, ইজরায়েল ১১, পাকিস্তানে তিন, সৌদি আরবের ১২ টি স্যাটেলাইট মহাকাশে প্রেরণ করা হয়েছে।
ধারণা করা হয়ে থাকে মহাকাশে প্রেরণ করা ৪২০০ টি স্যাটেলাইট এর মধ্যে এখন প্রায় ১৫০০ টির মত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যান্য প্রায়ই ২৭০০ টির মত স্যাটেলাইট অকেজো হয়ে পড়েছে এবং অকেজো হয়ে গেছে। এসকল অকেজো স্যাটেলাইট গুলো মহাকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে যার ওজন প্রায় ২০ লাখ কেজির বেশি।
হিসেবে স্যাটেলাইট গুলোর মধ্যে একটি স্যাটেলাইট রয়েছে যার নাম “জিইও স্যাটেলাইট”। এই স্যাটেলাইট টি যেকোনো মুহূর্তে দেখলে মনে হবে এটি স্থির হয়ে আছে কিন্তু এটি সারাক্ষণ পৃথিবীর চারপাশে ঘূর্ণির মতো ঘূর্ণায়মান। এ কাভারেজ বা ফুটপৃন্ট এত বেশি যে সমগ্র পৃথিবীতে এর আওতায় নিয়ে আসতে মাত্র তিনটি স্যাটেলাইট ই যথেষ্ট। মাত্র তিনটি স্যাটেলাইট এর সাথে সংযুক্ত করলে সমগ্র পৃথিবীতে কাভারেজ দেওয়া সম্ভব। একটি জিইও স্যাটেলাইট প্রায় ১৫ বছর তার সেবা দিয়ে যেতে পারে। স্যাটেলাইট ব্যবহার করে সবচেয়ে শক্তিশালী ব্রডকাস্ট রেডিও টিভি এবং আবহাওয়ার খবর জানা যায়। এই স্যাটেলাইট কে পৃথিবী টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা বা টেলিফোন ব্যবস্থার প্রাণ ও বলা যেতে পারে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১
পূর্বে যেমনটা জেনেছি বাংলাদেশ ও স্যাটেলাইটের যুগে পদার্পণ করেছে এবং সেটি সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে প্রেরণের মাধ্যমে। এটিই বাংলাদেশের প্রথম ভূস্থির যোগাযোগ সম্প্রচার এ ব্যবহৃত একমাত্র উপগ্রহ। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ২০১৮ সালের ১১ ই মে মহাকাশে প্রেরণ করা হয়। এটি কেনেডি স্পেস সেন্টার হতে উৎক্ষেপণ করা হয়।