Information

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের সম্পূর্ণ ভাষণ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের সম্পূর্ণ ভাষণ: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বর্তমানে যেটিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নামে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সেখানেই দুপুর ২ টা ৪৫ মিনিট থেকে ৩:০৩ পর্যন্ত এক বিশাল ঐতিহাসিক ভাষণ জাতির সামনে তুলে ধরেন যাকে আমরা ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ হিসেবে জানি।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ সম্পূর্ণ জানতে আসুন পূর্বে আমরা এই ঐতিহাসিক ভাষণের কিছু পটভূমি জেনে নেই।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের সম্পূর্ণ ভাষণ

আমাদের বাঙালির ইতিহাসে এমন অনেক দিন আছে যা আমাদের বাঙালি হিসেবে অন্তরে ধারণ করা উচিত বা মনে রাখা উচিত। ঠিক তেমনি ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু যে ভাষণ জাতির সামনে তুলে ধরেন তা বঙ্গবন্ধুর জীবনের শ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবেই মনে করা হয়। তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি দস্যুদের কামান-বন্দুক মেশিনগানের হুমকির মুখে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু প্রায় ১০ লক্ষাধিক মানুষের সামনে বজ্রকন্ঠে ঘোষণা দেন,  “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”।

(বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের সম্পূর্ণ ভাষণ: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের সম্পূর্ণ ভাষণ)

তৎকালীন সময়ে দেশ পরিচালনা হত পাকিস্তানি দোসরদের হাতে বঙ্গবন্ধু ছিল বিরোধী দলীয় সরকারের। তবুও ৭ই মার্চের ভাষণ শোনার জন্য জাতি মুখিয়ে ছিল ঠিক তেমনি পাকিস্তানি শোষকরাও চিন্তিত হয়ে পড়ে কি বলবেন বঙ্গবন্ধু? সেই মুহূর্তে পাকিস্তানী সামরিক চক্র একটি অন্ত কৌশলের আশ্রয় নেন। ভাষণের একদিন আগে ৬ই মার্চ পাকিস্তান হতে জেনারেল ইয়াহিয়া খান বঙ্গবন্ধুর কাছে টেলিফোন করেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর কাছে টেলিফোন করে রীতিমতো হুমকি দিয়ে বসেন তিনি বলেন, “যেন এমন কোন কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করেন যেখান থেকে ফিরে আসার উপায় আর না থাকে”। বঙ্গবন্ধু সেই হুমকিতে উপেক্ষা করে কঠিন পরিস্থিতিকে উপেক্ষা করে রেসকোর্স ময়দানে তার ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার প্রদানকৃত ভাষণে বিশেষ কিছু বিষয় উল্লেখ করেছেন যেমন তিনি তার ভাষণে রীতিমতো যুদ্ধের আভাস দিয়ে গেছে। তিনি তার ভাষণে মুসলিম জনতার কথা বলেছেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কথা বলেছেন।

তিনি তাঁর ভাষণে এক সময় উল্লেখ করেন: মাসের ২৮ তারিখে যেন কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মচারীরা তাদের বেতন গ্রহণ করে। যদি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বেতন দিতে নাকচ করে এবং কারো প্রতি যদি অন্যায় অত্যাচার গুলি চালায় তবে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। তিনি বলেন প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলা হয়। যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করার আদেশ তিনি তাঁর ভাষণে প্রদান করেন।

 বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের সম্পূর্ণ ভাষণ

(বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের সম্পূর্ণ ভাষণ: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের সম্পূর্ণ ভাষণ)

বঙ্গবন্ধু চাইলে ৭ই মার্চের ভাষণে ঘোষণাপত্র পাঠ করতে পারতেন বা দেশকে স্বাধীন ঘোষণা করতে পারতেন কিন্তু তিনি তা করেননি। এ প্রশ্নের জবাবে ১৯৭২ সালের ১৮ই জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্ট কে এলইডি টিভির জন্য একটি সাক্ষাৎকার দেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন তিনি জানতেন যে সেই মুহূর্তে স্বাধীনতা ঘোষণা করলে দেশের পরিস্থিতি কতটা খারাপ হতে পারত। তিনি চেয়েছিলেন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী তারা নিজেরাই তাদের প্রতি হামলা করুক যাতে করে বাঙালি জাতি তাদের হামলার প্রতিবাদে দেশকে মুক্ত করতে পারে।

তিনি বলেন, “আমি যদি সেই সময়ে স্বাধীনতার ঘোষণা দিতাম তবে আঘাত হানা ছাড়া আমাদের আর অন্য কোন পথ থাকতো না। আমি চেয়েছিলাম পাকিস্তানিরা আমাদের উপরে আঘাত হানে আমার জনগণ প্রতিরোধ করার জন্য প্রস্তুত ছিল”। পরবর্তীতে ইতিহাস প্রমাণ করেছে যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ই মার্চের সরাসরি ঘোষণা না দিয়ে তিনি কত বড় কাজটি করেছেন যেটা কিনা সঠিক প্রমাণ হয়েছে।

7 Easy Ways To Online Income-How To Earn Online Money

এবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের সেই ঐতিহাসিক ভাষণ টি জেনে নেওয়া যাক:

আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। আপনারা সবই জানেন এবং বুঝেন। আমরা আমাদের জীবন দিয়ে চেষ্টা করেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আজ ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুরে আমার ভাইয়ের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়েছে।

আজ বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়, বাংলার মানুষ তার অধিকার চায়। কী অন্যায় করেছিলাম, নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ সম্পূর্ণভাবে আমাকে আওয়ামী লীগকে ভোট দেন। আমাদের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি বসবে, আমরা সেখানে শাসনতন্ত্র তৈয়ার করব এবং এই দেশকে আমরা গড়ে তুলব, এ দেশের মানুষ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তি পাবে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আজ দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, তেইশ বৎসরের করুণ ইতিহাস বাংলার অত্যাচারের, বাংলার মানুষের রক্তের ইতিহাস।

তেইশ বৎসরের ইতিহাস মুমূর্ষু নর–নারীর আর্তনাদের ইতিহাস; বাংলার ইতিহাস এ দেশের মানুষের রক্ত দিয়ে রাজপথ রঞ্জিত করার ইতিহাস। ১৯৫২ সালে রক্ত দিয়েছি। ১৯৫৪ সালে নির্বাচনে জয়লাভ করেও আমরা গদিতে বসতে পারি নাই। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান মার্শাল ল জারি করে দশ বৎসর পর্যন্ত আমাদের গোলাম করে রেখেছে। ১৯৬৬ সালে ছয় দফা আন্দোলনে ৭ই জুনে আমার ছেলেদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ১৯৬৯-এর আন্দোলনে আইয়ুব খানের পতন হওয়ার পর যখন ইয়াহিয়া খান সাহেব সরকার নিলেন, তিনি বললেন, দেশে শাসনতন্ত্র দেবেন, গণতন্ত্র দেবেন। আমরা মেনে নিলাম।

Bangladesh Air Force Job Circular 2022

(বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের সম্পূর্ণ ভাষণ: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের সম্পূর্ণ ভাষণ)

তারপরে অনেক ইতিহাস হয়ে গেল, নির্বাচন হলো। আমি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সাহেবের সঙ্গে দেখা করেছি। আমি, শুধু বাংলার নয়, পাকিস্তানের মেজরিটি পার্টির নেতা হিসাবে তাঁকে অনুরোধ করলাম, ১৫ই ফেব্রুয়ারি তারিখে আপনি জাতীয় পরিষদের অধিবেশন দেন। তিনি আমার কথা রাখলেন না, তিনি রাখলেন ভুট্টো সাহেবের কথা। তিনি বললেন, প্রথম সপ্তাহে মার্চ মাসে হবে। আমরা বললাম, ঠিক আছে, আমরা অ্যাসেম্বলিতে বসব। আমি বললাম, অ্যাসেম্বলির মধ্যে আলোচনা করব; এমনকি আমি এ পর্যন্ত বললাম, যদি কেউ ন্যায্য কথা বলে, আমরা সংখ্যায় বেশি হলেও, একজনও যদি সে হয়, তার ন্যায্য কথা আমরা মেনে নেব।

Primary Teacher 3rd Phase Result 2022

জনাব ভুট্টো সাহেব এখানে এসেছিলেন, আলোচনা করলেন। বলে গেলেন যে আলোচনার দরজা বন্ধ না, আরও আলোচনা হবে। তারপর অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপ করলাম, আপনারা আসুন বসুন, আমরা আলাপ করে শাসনতন্ত্র তৈয়ার করি। তিনি বললেন, পশ্চিম পাকিস্তানের মেম্বাররা যদি এখানে আসেন, তাহলে কসাইখানা হবে অ্যাসেম্বলি। তিনি বললেন, যে যাবে তাকে মেরে ফেলে দেওয়া হবে। যদি কেউ অ্যাসেম্বলিতে আসে তাহলে পেশোয়ার থেকে করাচি পর্যন্ত দোকান জোর করে বন্ধ করা হবে। আমি বললাম, অ্যাসেম্বলি চলবে। তারপর হঠাৎ ১ তারিখে অ্যাসেম্বলি বন্ধ করে দেওয়া হলো।

ইয়াহিয়া খান সাহেব প্রেসিডেন্ট হিসাবে অ্যাসেম্বলি ডেকেছিলেন। আমি বললাম যে, আমি যাব। ভুট্টো সাহেব বললেন, তিনি যাবেন না। ৩৫ জন সদস্য পশ্চিম পাকিস্তান থেকে এখানে আসলেন। তারপরে হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়া হলো। দোষ দেওয়া হলো বাংলার মানুষকে, দোষ দেওয়া হলো আমাকে। বন্দুকের মুখে মানুষ প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠল।

আমি বললাম, শান্তিপূর্ণভাবে আপনারা হরতাল পালন করেন। আমি বললাম, আপনারা কলকারখানা সবকিছু বন্ধ করে দেন। জনগণ সাড়া দিল। আপন ইচ্ছায় জনগণ রাস্তায় বেরিয়ে পড়ল। তারা শান্তিপূর্ণভাবে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলো।

(বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের সম্পূর্ণ ভাষণ: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের সম্পূর্ণ ভাষণ)

কী পেলাম আমরা? যে আমার পয়সা দিয়ে অস্ত্র কিনেছি বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য, আজ সেই অস্ত্র ব্যবহার হচ্ছে আমার দেশের গরিব-দুঃখী আর্ত মানুষের বিরুদ্ধে, তার বুকের উপর হচ্ছে গুলি। আমরা পাকিস্তানের সংখ্যাগুরু। আমরা বাঙালিরা যখনই ক্ষমতায় যাবার চেষ্টা করেছি, তখনই তারা আমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। টেলিফোনে আমার সঙ্গে তাঁর কথা হয়। তাঁকে আমি বলেছিলাম, জনাব ইয়াহিয়া খান সাহেব, আপনি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট, দেখে যান কীভাবে আমার গরিবের উপরে, আমার বাংলার মানুষের উপরে গুলি করা হয়েছে, কী করে আমার মায়ের কোল খালি করা হয়েছে। আপনি আসুন, দেখুন, বিচার করুন। তিনি বললেন, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ১০ তারিখে রাউন্ড টেবিল কনফারেন্স ডাকব।

আমি বলেছি, কিসের বৈঠক বসবে, কার সঙ্গে বসব? যারা আমার মানুষের বুকের রক্ত নিয়েছে, তাদের সঙ্গে বসব? হঠাৎ আমার সঙ্গে পরামর্শ না করে পাঁচ ঘণ্টা গোপনে বৈঠক করে যে বক্তৃতা তিনি করেছেন, সমস্ত দোষ তিনি আমার উপরে দিয়েছেন, বাংলার মানুষের উপর দিয়েছেন।

 বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের সম্পূর্ণ ভাষণ 02

ভাইয়েরা আমার, ২৫ তারিখে অ্যাসেম্বলি কল করেছে। রক্তের দাগ শুকায় নাই। আমি ১০ তারিখে বলে দিয়েছি যে ওই শহীদের রক্তের উপর পা দিয়ে কিছুতেই মুজিবুর রহমান যোগদান করতে পারে না। অ্যাসেম্বলি কল করেছে। আমার দাবি মানতে হবে: প্রথম, সামরিক আইন মার্শাল ল উইথ ড্র করতে হবে, সমস্ত সামরিক বাহিনীর লোকদের ব্যারাকে ফেরত নিতে হবে, যেভাবে হত্যা করা হয়েছে তার তদন্ত করতে হবে, আর জনগণের প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে । তারপর বিবেচনা করে দেখব, আমরা অ্যাসেম্বলিতে বসতে পারব কি পারব না। এর পূর্বে অ্যাসেম্বলিতে বসতে আমরা পারি না।

(বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের সম্পূর্ণ ভাষণ: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের সম্পূর্ণ ভাষণ)

আমি, আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না। আমরা এ দেশের মানুষের অধিকার চাই। আমি পরিষ্কার অক্ষরে বলে দিবার চাই যে আজ থেকে এই বাংলাদেশে কোর্ট-কাচারি, আদালত-ফৌজদারি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। গরিবের যাতে কষ্ট না হয়, যাতে আমার মানুষ কষ্ট না করে, সে জন্য সমস্ত অন্যান্য জিনিসগুলো আছে, সেগুলির হরতাল কাল থেকে চলবে না। রিকশা, গরুর গাড়ি চলবে, রেল চলবে, লঞ্চ চলবে; শুধু সেক্রেটারিয়েট, সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট, জজকোর্ট, সেমি গভর্নমেণ্ট দপ্তরগুলো, ওয়াপদা কোনো কিছু চলবে না।

২৮ তারিখে কর্মচারীরা বেতন নিয়ে আসবেন। এর পরে যদি বেতন দেওয়া না হয়, আর যদি একটা গুলি চলে, আর যদি আমার লোকদের হত্যা করা হয়, তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ রইল, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে, এবং জীবনের তরে রাস্তাঘাট যা যা আছে সবকিছু, আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি, তোমরা বন্ধ করে দেবে। আমরা ভাতে মারব, আমরা পানিতে মারব। তোমরা আমার ভাই, তোমরা ব্যারাকে থাকো, কেউ তোমাদের কিছু বলবে না। কিন্তু আর আমার বুকের উপর গুলি চালাবার চেষ্টা করো না। সাত কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না। আমরা যখন মরতে শিখেছি, তখন কেউ আমাদের দমাতে পারবে না।

(বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের সম্পূর্ণ ভাষণ: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের সম্পূর্ণ ভাষণ)

আর যে সমস্ত লোক শহীদ হয়েছে, আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে, আমরা আওয়ামী লীগের থেকে যদ্দুর পারি তাদের সাহায্য করতে চেষ্টা করব। যারা পারেন আমার রিলিফ কমিটিতে সামান্য টাকাপয়সা পৌঁছিয়ে দেবেন। আর এই সাত দিন হরতালে যে সমস্ত শ্রমিক ভাইরা যোগদান করেছেন, প্রত্যেকটা শিল্পের মালিক তাঁদের বেতন পৌঁছায়ে দেবেন। সরকারি কর্মচারীদের বলি, আমি যা বলি তা মানতে হবে। যে পর্যন্ত আমার এই দেশের মুক্তি না হবে খাজনা-ট্যাক্স বন্ধ করে দেওয়া হলো, কেউ দেবে না। মনে রাখবেন, শত্রুবাহিনী ঢুকেছে, নিজেদের মধ্যে আত্মকলহ সৃষ্টি করবে, লুটপাট করবে। এই বাংলায় হিন্দু মুসলমান বাঙালি অবাঙালি যারা আছে, তারা আমাদের ভাই। তাদের রক্ষার দায়িত্ব আপনাদের উপরে। আমাদের যেন বদনাম না হয়।

মনে রাখবেন রেডিও টেলিভিশনের কর্মচারীরা, যদি রেডিওতে আমাদের কথা না শোনেন, তাহলে কোনো বাঙালি রেডিও স্টেশনে যাবেন না। যদি টেলিভিশন আমাদের নিউজ না দেয়, কোনো বাঙালি টেলিভিশনে যাবেন না। দুই ঘণ্টা ব্যাংক খোলা থাকবে, যাতে মানুষ তাদের মায়নাপত্র নিবার পারে। কিন্তু পূর্ব বাংলা থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে এক পয়সাও চালান হতে পারবে না। টেলিফোন টেলিগ্রাম আমাদের এই পূর্ব বাংলায় চলবে এবং বিদেশের সঙ্গে নিউজ পাঠাতে চালাবেন। কিন্তু যদি এ দেশের মানুষকে খতম করার চেষ্টা করা হয়, বাঙালিরা বুঝে–শুনে কাজ করবেন। প্রত্যেক গ্রামে, প্রত্যেক মহল্লায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোল এবং তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো।

মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ্।

“এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”।

Related Articles